যোগাযোগ ফর্ম
Popular Posts
-
বাঙ্গালার নব্য লেখকদিগের প্রতি নিবেদন GET PDF ১) যশের জন্য লিখিবেন না। তাহা হইলে যশও হইবে না, লেখাও ভালো হইবে না। লেখা ভালো হইলে যশ আপনি...
-
বাঙালি কথাসাহিত্যিক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ (১৯২২-১৯৭১) চট্টগ্রাম শহরের ষোলশহরে জন্মগ্রহন করেন। তার পিতার নাম সৈয়দ আহমদউল্লাহ এবং মাতার নাম নাসিম ...
-
“সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি, সারা দিন আমি যেন ভালো হয়ে চলি।” “লেখা পড়া করে যে গাড়ি ঘোড়া চড়ে সে। লেখাপড়া যেই জানে সবলোকে তারে মানে।” “পাখ...
-
মেঘদূত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মেঘদূত প্রবন্ধটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রাচীন সাহিত্য (১৮৯১) গ্রন্থের অন্তগর্ত। প্রবন্ধটি প্...
-
Get pdf মাইকেল মধুসূদন দত্তের দুটি প্রহসন রয়েছে, একটি হলো একেই কি বলে সভ্যতা আরেকটি হলো বুড়ো সালিকের ঘাড়ে রোঁ । প্রহসন হলো হাস্যরস বিশিষ...
-
সুবোধ ঘোষ এর জন্ম ১৯০৯ সালের বিহারের হাজারিবাগে, তার আদি নিবাস হলো ঢাকা জেলার বিক্রমপুরে। একটানা প্রায় চল্লিশ বছর ধরে আনন্দবাজার পত্রিকায় ...
-
বাংলা সাহিত্যে এমন একজন সাহিত্যিক রয়েছেন, যিনি চাকরি ও ব্যবসার কাজ ছেড়ে পুরোপুরি সাহিত্য রচনায় মনোনিবেশ করেছেন এবং সাহিত্যকেই পেশা হিসেবে ব...
-
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জুন চব্বিশ পরগণা জেলার নৈহাটির নিকটবর্তী কাঁঠালপাড়া গ্রামে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ...
-
স্বৈরাচারীর বিরুদ্ধে - সন্ন্যাসী এক স্বৈরাচারী সরকার , যার নীচে পড়ে আছে মানুষের স্বপ্ন মিথ্যা প্রতিশ্রুতি , ভয় আর অবিচার। পলকের প্রতি...
-
কেন ? আমিরুল ইসলাম খান আছে মানব, আছে মানবী পাই না খুঁজে মানবতা আছে নেতা, আছে নেত্রী পাইনা খুঁজে নৈতিকতা আছে বিদ্যা আছে শিক্ষা তবু যে কেন বর...
Top Links Menu
About blog
বাঙ্গালার নব্য লেখকদিগের প্রতি নিবেদন
GET PDF
১) যশের জন্য লিখিবেন না। তাহা হইলে যশও হইবে না, লেখাও ভালো হইবে না। লেখা ভালো হইলে যশ আপনি আসিবে।
‘লেখক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় খ্যাতি অর্জন এবং সুনামের উদ্দেশ্যে সাহিত্য রচনা না করতে নতুন লেখকদের প্রতি আহŸান করেছেন কেননা লেখা যদি ভালো হয় তাহলে খ্যতি এবং সুনাম এমনি এমনি আসবে।’
২) টাকার জন্য লিখিবেন না। ইউরোপে অনেক লোক টাকার জন্যই লেখে এবং টাকাও পায়; লেখাও ভালো হয়। কিন্তু আমাদের এখনও সে দিন হয় নাই। এখন অর্থের উদ্দেশ্যে লিখিতে গেলে, লোকরঞ্জন-প্রবৃত্তি প্রবল হইয়া পড়ে। এখন আমাদিগের দেশের সাধারণ পাঠকের রুচি ও শিক্ষা বিবেচনা করিয়া লোকরঞ্জন করিতে গেলে রচনা বিকৃত অনিষ্টকর হইয়া উঠে।
‘টাকার জন্য অনেক লেখক সাহিত্য রচনায় হাত দেন কিন্তু বঙ্কিমচন্দ্র চট্টেপাধ্যায় তাদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন আমাদের দেশের সাহিত্যিকদের এখন ও টাকার বিনিময়ে লেখার সময় এখন ও আসে নি কারন আমাদের দেশে টাকা দিয়ে রচিত সাহিত্যকর্ম অবশ্যই পাঠকের রুচির আশানুযায়ী হতে হবে, ধরো তুমি টাকার বিনিময়ে লেখা শুরু করলে, তাহলে তোমাকে সকলের রুচিমত লেখা লিখতে হবে তখন দেখা যাবে, যে ব্যাক্তি তোমাকে টাকার বিনিময়ে লেখা লিখে নিবে তাদের মধ্যে কেউ পছন্দ করে প্রকৃতি নিয়ে লেখা,কেউ পছন্দ করে বিজ্ঞান নিয়ে লেখা অথাৎ নানা মুনির নানা মত থাকবেই। এর ফলে লেখকের মধ্যে থাকা সৃজনশীলতা নষ্ট হয়ে যায় আর সেটা করলে লেখকের সাহিত্যকর্মের মৌলিকতা থাকে না বিকৃত হয়ে যায়।’
৩। যদি মনে এমন বুঝিতে পারেন যে, লিখিয়া দেশের বা মনুষ্যজাতির কিছু মঙ্গল সাধন করিতে পারেন অথবা সৌন্দর্য সৃষ্টি করিতে পারেন, তবে অবশ্য লিখিবেন। যাহারা অন্য উদ্দেশ্যে লেখেন, তাঁহাদিগকে যাত্রাওয়ালা প্রভৃতি নীচ ব্যবসায়ীদিগের সঙ্গে গণ্য করা যাইতে পারে।
‘যাদের লেখার মাধ্যমে দেশের মাানুষের উন্নতি হয় লেখক তাদের সাহিত্য রচনার জন্য আহŸান করেছেন, কারন লেখকের মতে সাহিত্য রচনার উদ্দেশ্য একমাত্র পাঠকের মঙ্গল সাধনা করা আর যারা অন্য উদ্দেশ্যে সাহিত্য রচনা করে লেখক তাদের যাত্রাওয়ালা এবং প্রভৃতি নীচ ব্যবসায়ীদের সাথে তুলনা করেছেন। যেমন তোমরা জান মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেক লেখক তাদের লেখনীর মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন আবার কাজী নজরুল ইসলাম ইংরেজদের বিরুদ্ধে লেখার মাধ্যমে বিদ্রোহ করে জনমানবে সাহস যুগিয়েছেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এমন মহান লেখকদের লেখার আহবান জানিয়েছেন।’
৪। যাহা অসত্য, ধর্মবিরুদ্ধ; পরনিন্দা বা স্বার্থসাধন যাহার উদ্দেশ্য।সেসকল প্রবন্ধ কখনো হিতকর হইতে পারে না । সুতরাং তাহা একবারে পরিহার্য । সত্য ও ধর্মই সাহিতের উদ্দেশ্য। অন্য উদ্দেশ্যে লেখনী-ধারণ মহাপাপ।
‘মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে লেখা, ধর্মের বিরুদ্ধে লেখা, অন্যের নিন্দাচরণ করা এবং নিজের স্বার্থসাধন হয় এমন সাহিত্য রচনা করা বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মহাপাপের সামিল বলে উল্লেখ করেছেন কারন মিথ্যা কোনো বিষয়বস্তু সাহিত্যের উপকরন হতে পারে না, এতে করে পাঠক সাহিত্যের প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষন করে। অনেক লেখক আবার ধর্মের বিরুদ্ধে লেখে, এমন লেখা ধর্মভীরু সাধারন পাঠকের মনে আঘাত হানে। কেউ আবার অন্যের বিরুদ্ধে লেখার মাধ্যমে নিন্দামূলক অভিব্যাক্তি প্রকাশ করে।’
৫। যাহা লিখিবেন, তাহা হঠাৎ ছাপাইবেন না। কিছু কাল ফেলিয়া রাখিবেন। কিছুকাল পরে উহা সংশোধন করিবেন। তাহা হইলে দেখিবেন , প্রবন্ধে অনেক দোষ আছে। কাব্য নাটক উপন্যাস দুই এক বৎসর ফেলিয়া রখিয়া তারপর সংশোধন করিলে বিশেষ উৎকর্ষ লাভ করে যাাঁহারা সাময়িক সাহিত্যের কার্যে ব্রতী, তাঁহাদের পক্ষে এই নিয়ম রক্ষাটি ঘটিয়া উঠে না। এজন্য সাময়িক সাহিত্য, লেখকের পক্ষে অবনতিকর।
‘যাই লেখা হোক না কেন সাথে সাথেই তা প্রকাশ করা উচিত নয়। কিছুদিন পর সে লেখা সংশোধন করলে এবং খুটিয়ে খুটিয়ে দেখলে অনেক ভুল ত্রæটি ধরা পড়ে ফলে অনেক সময় নিয়ে সেগুলো সংশোধন করা যায় কিন্তু তারাতারি প্রকাশিত লেখা লেখকের উন্নতির পথে বাধা সৃষ্টি করে।’
৬। যে বিষয়ে যাহার অধিকার নাই, সে বিষয়ে তাহার হস্তক্ষেপ অকর্তব্য। এটি সোজা কথা কিন্তু সাময়িক সাহিত্যতে এ নিয়মটি রক্ষিত হয় না।
‘মনে কর তুমি অর্থনীতি সম্পর্কে কিছু জান না এখন তুমি যদি অর্থনীতির উন্নয়ন বিষয়ে একটি প্রবন্ধ লেখা শুরু কর তাহলে সে প্রবন্ধ কি মানসম্মত লেখা হবে? প্রাবন্ধিক সে বিষয়াটি নতুন লেখকদের মেনে চলতে বলেছেন অথাৎ তুমি যে বিষয় সম্পর্কে জান তুমি সেই বিষয়েই সাহিত্যকর্ম শুরু কর যা তুমি জান না সে বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না।’
৭। বিদ্যা প্রকাশের চেষ্টা করিবেন না। বিদ্যা থাকিলে, তাহা আপনিই প্রকাশ পায়, চেষ্টা করিতে হয় না। বিদ্যা প্রকাশের চেষ্টা পাঠকের অতিশয় বিরক্তিকর এবং রচনার পারিপাট্যের বিশেষ হানিজনক । এখনকার প্রবন্ধে ইংরাজি,সংস্কৃত,ফরাসি,জার্মান কোটেশন বড় বেশি দেখিতে পাই। যে ভাষা আপনি জানেন না, পরের গ্রন্থের সাহায্যে সে ভাষা হইতে কদাচ উদ্বৃত করিবেন না।
‘লেখার মধ্যে বিদ্যা জাহির করার চেষ্টা করাকে নিন্দার চোখে দেখেন প্রাবন্ধিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কারন,কেউ যদি জ্ঞান বিদ্যায় ভরপুর হয় তার লেখনীতে বিদ্যা এমনিতেই প্রকাশ পাবে।শুধু শুধু না জানা শব্দগুচ্ছের ব্যাবহার পাঠকের কাছে বিরক্তির কারণ হয়ে দাড়ায়।’
৮।অলংকার প্রয়োগ বা রসিকতার জন্য চেষ্টিত হইবেন না। স্থানে স্থানে অলংকার বা ব্যাঙ্গের প্রয়োজন হয় বটে; লেখকের ভান্ডারে এ সামগ্রী থাকিলে, প্রয়োজন মতে আপনিই আসিয়া পৌঁছিবে-ভাÐারে না থাকিলে মাথা কুটিলেও আসিবে না। অসময়ে বা শূন্য ভান্ডারে অলংকার প্রয়োগের বা রসিকতার চেষ্টার মতো কদর্য আর কিছুই নাই।
‘কেউ যদি রসিক হয় তা হলে তার লেখায় আপনা আপনিই রসিকতা ফুটে উঠে। চেষ্টা করে রসিকতা ফুটিয়ে তোলার মাধ্যমে লেখার মান নষ্ট হয়। লেখকের ভান্ডারে অলংকার এর প্রাচুর্য থাকলে লেখার মধ্যে তা এমনি এমনি প্রকাশ পাবে।’
৯। যে স্থানে অলংকার বা ব্যাঙ্গ বড় সুন্দর বলিয়া বোধ হইবে, সেই স্থানটি কটিয়া দিবে , এটি প্রচীন বিধি।আমি সে কথা বলি না । কিন্তু আমার পরামর্শ এই যে, সে স্থানটি বন্ধুবর্গকে পুনঃ পুনঃ পড়িয়া শুনাইবে। যদি ভালো না হইয়া থাকে, তবে দুই চারি বার পড়িলে লেখকের নিজেরই আর উহা ভালো লাগিবে না- বন্ধুবর্গের নিকট পড়িতে লজ্জা করিবে । তখন উহা কাটিয়া দিবে।
‘লেখার যে সকল স্থানে অলংকার ভালো বলে মনে হবে তা কেটে দিতে হয় এটি প্রাচীন নিয়ম কিন্তু বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কেটে দেওয়ার আগে ভালো করে যাচাই করে নেওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন।’
১০। সকল অলংকারের শ্রেষ্ঠ অলংকার সরলতা। যিনি সোজা কথায় আপনার মনের ভাব সহজে পাঠককে বুঝাইতে পারেন, তিনিই শ্রেষ্ঠ লেখক কেননা লোখার উদ্দেশ্য পাঠককে ।
‘তুমি তোমার লেখায় কি বুঝাতে চাও তা যদি পাঠক উপলদ্ধি করতে না পারে তাহলে সে লেখার কোনো সার্থকতা নেই। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর মতে লেখার সরলতা যত বেশি হবে পাঠকের কাছে লেখাটি ততটুকুই বোধগম্য হবে তাই লেখা জটিল না করে যথাসম্ভব সহজবোধ্য করা উচিত।’
১১। কাহার ও অনুকরণ করিও না। অনুকরণে দোষগুলি অনুকৃত হয়, গুনগুলি হয় না। অমুক ইংরেজি বা সংস্কৃত বা বাঙ্গালা লেখক এইরূপ লিখিয়াছেন, আমি ও এরূপ লিখিব, একথা কদাপি মনে স্থান দিও না।
‘সাহিত্য রচনার ক্ষেত্রে কখনো কাউকে অনুকরন করা উচিত নয় কারন অনুকরণের মাধ্যমে শুধুমাত্র অপরের দোষগুলিই অনুকরণ করা হয় ফলে লেখার মান খারাপ হয়।’
১২। যে কথার প্রমান দিতে পারিবে না , তাহা লিখিও না । প্রমানগুলি সংযুক্তকরা সকল সময়ে প্রয়োজন হয় না, কিন্তু হাতে থাকা চাই।
‘লেখার সময় যে সকল বক্তব্যের প্রমান সাহিত্যিক দিতে পারবে না সে সব বক্তব্য লেখার মধ্যে ব্যাবহার না করার জন্য বঙ্কিমচন্দ্র চট্টেপাধ্যায় উপদেশ দিয়েছেন। মনে কর তুমি ইলিশ মাছ নিয়ে একটি প্রবন্ধ লিখলে সেই প্রবন্ধে তুমি বললে ইলিশ মাছ খেতে ভালো, গায়ে ছোট ছোট আশ আছে, পুকুরে চাষ করা যায় তাহলে কি তুমি এসবগুলো বক্তব্যের যথাযথ প্রমান দিতে পারবে এজন্য এমন কোনো লেখা সাহিত্যে ব্যবহার করবে না যা তুমি প্রমান করতে পারবে না।’
১৩। বাঙ্গালা সাহিত্য,বাঙ্গালার ভরসা। এই নিয়মগুলি বাঙ্গালার লেখকদিগের দ্বারা রক্ষিত হইলে, বাঙ্গালা সাহিত্যের উন্নতি বেগে হইতে থাকিবে।
‘বাংলা সাহিত্য বাংলাভাষী পাঠকের ভরসা, সঠিক ভাবে বাংলা সাহিত্যে লেখা সৃষ্টি না হলে পাঠক সাহিত্য বিমুখ হয়ে পড়বে সেজন্য সঠিক নিয়ম মেনে সাহিত্য রচনা করা উচিত তাহলেই সাহিত্যের উন্নতি সম্ভবপর হবে।’
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন