যা খুজতে চান

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

Popular Posts

About blog

বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন প্রবন্ধ, কবিতা, গল্প ,নাটক ইত্যাদি বিষয় আলোচনা এবং অডিও বই এর মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যকে বাঙালিদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া’ ই আমাদের উদ্দেশ্য,আমাদের তৈরি ভিডিও গুলো আপনাদের উপকারে লাগলে আমাদের শ্রম সার্থক হবে।
মঙ্গলবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২১
বাংলা সাহিত্যে এমন একজন সাহিত্যিক রয়েছেন, যিনি চাকরি ও ব্যবসার কাজ ছেড়ে পুরোপুরি সাহিত্য রচনায় মনোনিবেশ করেছেন এবং সাহিত্যকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তাকে কলম পেশা মজুর বলা হয়, তিনি হলেন মানিক বন্দোপাধ্যায়। মানিক বন্দোপাধ্যায়ের প্রকৃত নাম প্রবোধকুমার বন্দোপাধ্যায়,  ডাকনাম মানিক। মানিক বন্দোপাধ্যায় ছিলেন ফ্রয়েডীয় মনোসমীক্ষণ ও মার্কসীয় শ্রেণীসংগ্রাম তত্ত্ব দ্বারা গভীরভাবে  প্রভাবিত। ব্যক্তিগতভাবে মানিক বন্দোপাধ্যায় মধ্যবিত্ত মানসিকতার অধিকারী।পুতুলনাচের ইতিকথা উপন্যাসে  মানিক বন্দোপাধ্যায়ের সমাজতান্ত্রিক মানসিকতার পরিচয় মেলে, এটি মানিক বন্দোপাধ্যায় রচিত তৃতীয় উপন্যাস, উপন্যাসটি ১৯৩৬ সালে প্রকাশিত হয়।

পুতুলনাচের ইতিকথা উপন্যাসের প্রেক্ষাপট কলকাতার এক গ্রাম গাওদিয়া এবং সে গ্রামের সাধারণ মানুষ। উপন্যাসের প্রধান চরিত্র শশী। সদ্য কলকাতা থেকে ডাক্তারি পাস করে আসা শশীর গ্রাম্য জীবনযাপনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে এ উপন্যাসে। হারু ঘোষের বজ্রাঘাতে মৃত্যু এবং তার মৃতদেহ আবিষ্কার এর চিত্র তুলে ধরার মাধ্যমে উপন্যাসের সূচনা, শশী ডাক্তার সেদিন কলকাতা থেকে ফিরছিল নৌকা করে, তখন খালের ধারে বটগাছের কাছে সে আবিষ্কার করে পরানের বাবা হারুর মৃতদেহ। শশী শিক্ষিত ডাক্তার  হলেও তার মধ্যে মরাস্পর্শ অনুচিত এরকম নানা কুসংষ্কার বিদ্যমান ছিল, নৌকার মাঝি গোবর্ধন নীচু জাতের বলে, শশী তাকে মরা ছুঁতে নিষেধ করে। এই হারু  তার মেয়ে মতির জন্য বাজিতপুর গিয়েছিল পাত্র দেখতে।  পাত্র দেখে ফিরে আসার সময় বজ্রাঘাতে তার মৃত্যু হয়, দূর থেকে শশী সেই মৃতদেহ দেখতে পেয়ে মৃতদেহটি গাওদিয়া গ্রামে নিয়ে আসে। 

হারুর পুত্র পরানের স্ত্রী কুসুম পুতুলনাচের ইতিকথার নায়িকা। কুসুম শশীকে ভালোবাসে, লোকায়ত ভাষায় শশীকে কাছে পাওয়ার জন্য নানা অনুভূতি প্রকাশ করে, কুসুমের ইচ্ছে হয় কোনো এক চাঁদনী রাতে শশীকে নিয়ে কোথাও দূরে চলে যেতে। কুমুদের সাথে মতির বিয়ের কথাবার্তা চলে কিন্তু শশীর মন মানে না মতিকে কুমুদের হাতে তুলে দিতে। সমস্যা সমাধানে শশী নিজেই মতিকে বিয়ে করতে উদ্যত হয়, কিন্তু কুসুমের কথায় তার এ ভাবনা মাটিচাপা পড়ে। প্রথমে  কুসুম শশীকেে আপন করে পাওয়ার জন্য নানাভাবে মনের ভাব প্রকাশ করলেও শশীর সম্মতির উদাসীনতা দেখা যায়। পরবর্তীতে যখন শশী কুসুমকে আহবান করে তখন কুসুম আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। লাল টকটকে তাতানো লোহা ফেলে রাখলে তা যেমনি আস্তে আস্তে ঠাণ্ডা হয়ে যায় তেমনি কুসুমও  শশীর প্রতি আগ্রহ হারায়, তার  আত্মিক মৃত্যু ঘটে। এর কারণ একটাই শশীর কুসুমের প্রতি উপেক্ষা।

মতির ইচ্ছে হয় শশীর মতো বড়লোকের ঘরে তার বিয়ে হবে, যাত্রাদলের নায়ক কুমুদকে দেখে তার স্বপ্নগুলো জাগ্রত হয়। কুমুদকে রাজকুমারের আসনে বসিয়ে নিজেকে কুমুদের রানী ভাবতে তার ভালো লাগে। গাওদিয়া গ্রামে কুমুদ মতি কে সোনার মাকড়ি বানিয়ে দিয়েছিল। সেই কুমুদ যাত্রা শেষে গাওদিয়া ছেড়ে কলকাতা চলে গেছে , কুমুদকে খোজার  জন্য মতি শশীর সাথে কলকাতায় যায়, কিন্তু সে ব্যর্থ হয়। শশীর বন্ধু কুমুদ, মতিকে আকৃষ্ট করে বিয়ে করার জন্য গাওদিয়ায় ফিরে আসে এবং বিয়ে করে আবার কলকাতায় ফিরে আসে। পরবর্তীতে কুমুদ মতিকে নিজের মতো করে গড়ে তোলে, মতিও হারিয়ে যায় কুমুদের রাজ্যে।

গোপাল শশীর বাবা, গাওদিয়া গ্রামে তার শক্ত ভিত রয়েছে, গাওদিয়াতে গোপাল প্রচুর জমিজমার মালিক, গ্রামে তার যেমন বদনাম রয়েছে তেমনই সেনদিদির সাথে সম্পর্কও রয়েছে আবার পুত্রের সাথে তার বিরোধও আছে। এমনকি, কলকাতার বড়লোক ব্যবসায়ী নন্দকে ফাঁদে ফেলে তার মেয়ে বিন্দুর বিয়ে দিয়েছে ।

যাদব পণ্ডিত সূর্যবিজ্ঞানে বিশ্বাসী, শশীর ডাক্তারীবিদ্যার বিরোধীতাকারী।   যাদব ও তার স্ত্রী পাগলাদিদির ইচ্ছামৃত্যু উপন্যাসটিকে বহুরুপে চিত্রিত করে। ইচ্ছাকৃতভাবে মৃত্যুর আগে যাদব পণ্ডিত তার সমস্ত সম্পত্তি শশীর উপর দায়িত্ব দিয়ে একটি হাসপাতাল করার জন্যে দান করে যায়। শশী সে দায়িত্ব অক্ষরে অক্ষরে পালন করে। 

যামিনী কবিরাজও শশীর ডাক্তারী চিকিৎসার উপর ভরসা করতে পারে না উপরন্তু শশীর নামে নানা কুৎসা রটিয়ে বেড়ায় অথচ তার স্ত্রী সেনদিদির বসন্ত হলে শশীর চিকিৎসার কারণেই আরোগ্যলাভ করে। শশীর বাবা গোপাল এর সাথে সেনদিদির সম্পর্ক  ছিল। উপন্যাসের শেষ অংশে বর্ননা করা হয় সেনদিদি সন্তান প্রসবের সময় মারা যায়  এবং গোপাল সেই সন্তান ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নেয় ।

পুতুলনাচের ইতিকথা উপন্যাসে শশী-গোপাল-কুসুম-মতি-কুমুদ-যামিনী কবিরাজ-যাদব পণ্ডিত এ চরিত্র গুলো কে পুতুলের সাথে তুলনা করা হয়েছে। এ উপন্যাসে আক্ষরিক অর্থে পুতুল নাচের কোনো ইঙ্গিত নেই, এখানে পুতুল হলো সাধারণ মানুষ, প্রতিটি মানুষ নিজস্ব আত্মকাম, নিজের লোভ এবং আকাঙ্খা দ্বারাই পরিচালিত। পুতুলনাচে যেমন কারিগর নিজ হস্তে নানা কৌশল এর মাধ্যমে আড়ালে বসে পুতুলের খেলা দেখায় তেমনি মানুষের আখাঙ্কাই তার চলনশক্তির প্রকৃত নিয়ামক। 


0 comments:

Blogger দ্বারা পরিচালিত.